জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা দিয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল আসছে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশ্যে সারাদেশের নাগরিকদের মতামত গ্রহণের কর্মসূচি দিয়েছে তারা।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংগঠন দুটির নেতারা জানান, নতুন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে জনগণের মতামত জানতে প্রায় এক লাখ জনমত সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি, দলটির নাম ও প্রতীক প্রস্তাব দেওয়ার জন্যও সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এত বড় পরিসরে জনমত সংগ্রহের উদ্যোগ এটিই প্রথম।
সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি উভয়ই জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষার জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অব্যাহত থাকবে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার জন্য একসাথে কাজ করবে।
এটি জনমত গ্রহণের জন্য নেওয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পরামর্শমূলক প্রচেষ্টা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা শুধু একটি দল গঠন করছি না, বরং এমন একটি আন্দোলন গড়ে তুলছি, যেখানে একজন পোশাক শ্রমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পর্যন্ত সবাই নীতিনির্ধারণে মতামত দিতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ডিজিটাল ও অফলাইন উভয় পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। যাদের ইন্টারনেট নেই, তারা সরাসরি ফরম পূরণ করতে পারবেন, আর প্রযুক্তি-সচেতন জনগোষ্ঠীর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিজিটাল ফরম পাঠানো হবে।
এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আসল পরিবর্তন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসগুলিতে ঘটে না। এই কারণেই আমরা মাঠে আছি, কৃষকদের সঙ্গে আছি, রিক্সাচালকদের কথা শুনব এবং বিরতির সময় পোশাক শ্রমিকদের কথা শুনব। এই দল উপরে থেকে নয়, জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসবে।
এর আগে, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করে বলেছে-
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মুখে গণহত্যাকারী আওয়ামী ফ্যাসিবাদী লীগের পতন ঘটে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতন ঘটলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী উপাদানের বিলোপ ঘটেনি। গণঅভ্যুত্থানের এক দফা তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান এবং সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ গড়ার কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়ে গেছে। এই জনপদের মানুষ ১৯৪৭-এর পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ এর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি জুলুম-শোষণহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা বারবার ব্যক্ত করেছে। কিন্তু পূর্বের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো এই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবরূপ দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আরেকবার এদেশের মানুষের সামনে গাঠনিক মুহূর্ত হাজির হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা দেশের সর্বস্তরের নাগরিকগণের; বিশেষত, তরুণ জনগোষ্ঠীর নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্প তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো তা ধারণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে অভ্যুত্থানের শক্তি ছাত্র-তরুণরা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হওয়া নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্পকে ধারণ করে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সাথে নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
নতুন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে জনগণ কী প্রত্যাশা করে সে সম্পর্কে সক্রিয়ভাবে জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ করতে এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য এটিকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে এমন মূল অগ্রাধিকারগুলি নির্ধারণ করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশব্যাপী জনমত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
একটি যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী এবং হাসনাত আবদুল্লাহ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তৃণমূল ও প্রান্তিকজনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করেছেন । তারা জোর দেন যে, একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে এই উদীয়মান রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সমস্ত নাগরিকের আশা ও আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হওয়া উচিত।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এটি আমাদের দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দল কর্তৃক জনমত গ্রহণের উদ্দেশ্যে গৃহীত সবচেয়ে বড় পরামর্শমূলক প্রচেষ্টা।’ ‘আমরা শুধু একটি দল শুরু করছি না-আমরা এমন একটি আন্দোলন শুরু করছি যেখানে একজন পোশাক শ্রমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিকের তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন নীতিগুলি গঠনে মতামত রয়েছে।’
এই উদ্যোগটি একটি বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে, যা নিশ্চিত করে যে ডিজিটালি সংযুক্ত এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে। যাদের ইন্টারনেট অ্যাক্সেস নেই তাদের জন্য সরাসরি পূরণ করার ফর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে প্রযুক্তি-নির্ভর জনগোষ্ঠীর কাছে ডিজিটাল ফর্মগুলি হোয়াটসঅ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে ।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আসল পরিবর্তন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসগুলিতে ঘটে না। এই কারণেই আমরা মাঠে আছি, কৃষকদের সাথে আছি, রিক্সাচালকদের কথা শুনব এবং বিরতির সময় পোশাক শ্রমিকদের কথা শুনব । এই দল উপরে থেকে নয়, জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসবে।’
‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ স্লোগানের আওতায় পরামর্শমূলক উদ্যোগের লক্ষ্য সারা দেশে সকল কমিটি এবং তাদের কর্মীদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ককে যুক্ত করা। রিকশাচালক, দোকানদার, দিনমজুর, গৃহকর্মী, শিক্ষক, ঝাড়ুদার এবং সর্বস্তরের এক লক্ষেরও বেশি মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার বিষয়ে তাদের মতামত চাওয়া এই কর্মসূচির লক্ষ্য ।
নতুন দলটি কিছু মানুষের নয়, অনেকের কণ্ঠস্বর হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যারা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্বারা বাদ পড়েছে তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। আমরা সকল নাগরিকের কথা শোনার মধ্য দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা ধারণ করি।
মূল তথ্য:
*কর্মসূচির লক্ষ্য হলো নতুন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে প্রায় এক লাখ মতামত সংগ্রহ করা।
*নতুন দলের জন্য নাম ও প্রতীক প্রস্তাব দেওয়ার জন্যও জনগণকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
*বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি অনন্য উদ্যোগ, যেখানে এত ব্যাপক আকারে জনমত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
*বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি উভয়ই জুলাই বিপ্লবের চেতনা রক্ষার জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসাবে অব্যাহত থাকবে এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার জন্য একসাথে কাজ করবে।